ব্রিটিশ হজযাত্রী আদম মুহাম্মদ (৫২)দীর্ঘ ১১ মাস পায়ে হেঁটে পবিত্র মক্কায় এসে পৌঁছেছেন । গত রবিবার (২৬ জুন) মক্কার তানয়িম বা আয়েশা (রা.) মসজিদে এসে পৌঁছান তিনি। এ সময় স্থানীয়দের উষ্ণ অভ্যর্থনা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন কুর্দি বংশোদ্ভূত হজযাত্রী আদম মুহাম্মদ। মক্কায় তাঁকে অভ্যর্থনা দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁর হজযাত্রার খবর প্রকাশ পায়।
সৌদি সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়াকে এই হজযাত্রী বলেন, “২৫ বছর ধরে আমি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছি। করোনা মহামারি রোধে তখন চারদিকে সবার চলাচল বন্ধ ছিল। তখন আমি পবিত্র কোরআন পাঠে ব্যস্ত সময় পার করি। দীর্ঘ দেড় বছর পড়াশোনার পর একদিন ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর আমার মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি তৈরি হয়। তখন আমার মনে হলো, কেউ যেন আমাকে বলছে ‘তুমি হেঁটে মক্কায় গমন করো। ’”
এরপর তিনি মাত্র দুই মাসে দীর্ঘ ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। অবশ্য এই সময় একটি ব্রিটিশ সংস্থা তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করে। এই ভ্রমণে তিনি বৈরী আবহাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়লেও কারো বড় ধরনের বাধার মুখোমুখি হননি। নতুন কোনো দেশে প্রবেশ করলে পুলিশ তাঁকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে ভ্রমণকালে কারো কাছে সহযোগিতা না চাইলেও অসংখ্য মানুষ তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এসেছে।
হজযাত্রা শুরুর কথা জানিয়ে আদম বলেন, ২০২১ সালের ১ আগস্ট হেঁটে তিনি যুক্তরাজ্যের উলভারহ্যাম্পটন শহরের নিজ বাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করেন। ৯টি দেশ পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবের মক্কায় পৌঁছতে তাঁকে ছয় হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। এতে সময় লেগেছে ১০ মাস ২৬ দিন। সৌদি আরবে প্রবেশের আগে নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, চেক, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া, জর্দানসহ মোট ৯টি দেশ পাড়ি দেন মুহাম্মদ।
আদম বলেন, ‘আমার দীর্ঘ হজ ভ্রমণের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। ’ রেকর্ড ভাঙা বা অন্য কোনো ধরনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তাঁর নেই বলে জানান তিনি। মক্কায় পৌঁছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘হজ পালন আমার জীবনের বড় ও প্রিয় আকাঙ্ক্ষা ছিল। এ বছর তা পূরণ হচ্ছে বলে আমি খুবই আনন্দিত। ’ সৌদিতে প্রবেশের পরই স্থানীয়দের ভালোবাসা ও অভ্যর্থনা পেয়ে অভিভূত হন তিনি। সবার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি এই দীর্ঘ ভ্রমণের নাম দিয়েছেন, ‘দ্য পিস জার্নি’ বা শান্তিভ্রমণ। দীর্ঘ ভ্রমণে তাঁর সঙ্গী ছিল প্রায় আড়াই শ কেজি ওজনের তিন চাকার ট্রলি। এখানেই তিনি বিশ্রাম নিতেন এবং প্রয়োজনীয় সব জিনিস রাখতেন। দীর্ঘ হজ ভ্রমণের বেশির ভাগ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ ভিডিওর সম্প্রচার করতেন। ‘পিস জার্নি ফ্রম দ্য ইউকে টু মক্কা’ নামে তাঁর ভিডিওগুলো সামাজিক মাধ্যমে সাড়া জাগিয়েছে।